Home জাতীয় সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ছোবল মারার সুযোগ দেওয়া যাবে না : তথ্যমন্ত্রী

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ছোবল মারার সুযোগ দেওয়া যাবে না : তথ্যমন্ত্রী

117
0
SHARE

সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে কোনোভাবেই ছোবল মারার সুযোগ দেওয়া যাবে না জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সম্মিলিত শক্তিকে সতর্ক থাকতে বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

আজ শুক্রবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত মেজর জেনারেল সি আর দত্ত বীর উত্তমের স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেন ড. হাছান মাহমুদ।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে। সেই দেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের যখন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন তাকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা নয়, তাঁর হত্যকাণ্ড ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে গলাটিপে হত্যা করার অংশ। ১৯৭১ সালে যারা পকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেই আন্তর্জাতিক শক্তি এবং মৌলবাদী অপশক্তি তারা মিলে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। সেজন্য যেই চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ’৭৫-এর পর সেই চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে রাষ্ট্র পেছন দিকে হাঁটা শুরু করে।

সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিনাশ হয়নি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেই কারণেই মাঝেমধ্যে সেই অপশক্তি ফণা তোলে ছোবল মারার জন্য। কিন্তু যেই সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই শক্তির কাছে অপশক্তি সবসময় পরাজিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। তাদের কখনো মাথা তুলে ছোবল মারার সুযোগ দেওয়া যায় না।

ড. হাছান বলেন, ধর্মীয় প্রবাদ সবসময় সব ধর্মের জন্য কল্যাণকর। সব ধর্মই মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ, মমত্ববোধ, মানুষের প্রতি মানুষের দয়া সেই শিক্ষা দেয়। কোনো ধর্ম উগ্রবাদ সমর্থন করে না। ধর্মের ভিত্তিতে কোনো রাষ্ট্র হতে পারে না। অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ রচিত হয়েছে এবং চেতনাকে আমরা ভুলুণ্ঠিত হতে দিতে পারি না।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যদিও সময়ে সময়ে গুজব রটিয়ে সাম্প্রদায়িক হানাহানি সৃষ্টি করা হয়। সরকার সেটি কঠোর হাতে দমন করেছে। ভবিষ্যতেও সেটি কঠোরভাবে দমন করা হবে। আমরা মনে করি, একটি বৃহৎ ধর্মীয় গোষ্ঠীকে শত্রু সম্পত্তি আইন করে শত্রু আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে না। সেজন্যই এই আইনের পরিবর্তন করা হয়েছে। এই আইনের বলে যে হয়রানিগুলো করা হয়েছিল, যে জমিগুলো দখল করা হয়েছিল সেগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, আদালত গঠন করা হয়েছে। এবং কাজ চলছে। এটি কখনো কেউ ভাবেনি যে, এভাবে সম্ভবপর হবে। জননেত্রী শেখ হসিনা সেটি করেছেন। তিনি একদিকে খুব ধার্মিক, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক।

ধর্ম যখন ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায় তখন নিজের স্বার্থে ধর্মের অপব্যাখ্যা দেওয়া হয় বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।

এ সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, এই মাটি আপনাদের। এই দেশ আপনাদের। আপনারা এই মাটির সন্তান। সুতরাং এখানে কেউ কেউ চোখ রাঙালে পাল্টা চোখ রাঙাতে হবে। তাহলেই নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজতে সব সূচকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে ভারতকেও পেছনে ফেলেছি। আজকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সফলতা সেখানেই, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার সার্থকতা সেখানেই; কারণ আজ পাকিস্তানিরা আমাদের দিকে তাকিয়ে আক্ষেপ করে।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত মেজর জেনারেল সি আর দত্তের কথা স্মরণ করে হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি ছিলেন সাহসী, সৎ, অসাম্প্রদায়িক, নিরহঙ্কার এবং সবাইকে আপন করে নেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা তাঁর ছিল।

সভায় আরো বক্তব্য দেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উষাতন তালুকদার, ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, সাংবাদিক স্বপন কুমার সাহা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি প্রমুখ।