টানা চার কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর সোমবার (৩১ মে) দেশের শেয়ারবাজারে মূল্য সূচক কিছুটা কমেছে। সেই সঙ্গে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এই দরপতনকে স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন বলছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, কয়েকদিন ধরে শেয়ারবাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা মূল্য সংশোধন হওয়া স্বাভাবিক। তাছাড়া মূল্য সূচক কমলেও লেনদেন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এতে স্পষ্ট বড় পার্টি বাজার থেকে শেয়ার কিনছেন। সুতরাং এই দরপতন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসও ঊর্ধ্বমুখিতার মাধ্যমে পার করে শেয়ারবাজার। এতে প্রায় ৩৯ মাস পর প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ছয় হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে।
ছয় হাজার পয়েন্টের এই মাইলফলক স্পর্শ করার পর সোমবার লেনদেনের শুরু থেকেই শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আবারও ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৯৯০ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক দুই পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২০৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। তবে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২৮৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো বাজার মূলধন সোমবারের পতনের মধ্যেও আরও উচ্চতায় উঠে এসেছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ তিন হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। যা আগের কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ তিন হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ পতনের বাজারেও মূলধন বেড়েছে ৪০৯ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন বাড়লেও ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে, কমেছে তার দ্বিগুণের। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১০২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ২০৩টির। আর ৫৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এই দরপতনের বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এটা অবশ্যই স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন। কয়েক দিন ধরেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এখন থেকে একটু মূল্য সংশোধন হবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে আমি ভয়ের কিছু দেখি না।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজার এখন বেশ ভালো অবস্থা রয়েছে। বাজারে প্রচুর টাকা ঢুকছে, তা বড় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার চিত্র দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায়। তবে বাজার টানা বাড়তে থাকা ভালো না। কয়েকদিন বাড়ার পর আজ যে মূল্য সংশোধন হয়েছে এটা স্বাভাবিক। এটি বাজারের জন্যই ভালো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গুজবভিত্তিক বিনিয়োগ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যে কারণে যখনই শেয়ারের দাম একটু কমে, তারা আতঙ্কে বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে শেয়ারের দাম যখন কমে যাবে তখন কেনা। এজন্য বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে এবং বিনিয়োগ উপযুক্ত আইটেম (শেয়ার) নির্বাচন করার উপায় জানতে হবে। তাহলেই শেয়ারবাজার থেকে ভালো মুনাফা করা সম্ভব। কিন্তু অধিক মুনাফার লোভে গুজবে বিনিয়োগ করলে লোকসানের মধ্যে পড়তে হতে পারে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৭৩৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় দুই হাজার ১৪৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৪১২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
টাকার অংকে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কনফিডেন্স সিমেন্টের ৭৬ কোটি ৩২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাফার্জহোলসিম।
এছাড়াও লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইফাদ অটোস, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স এবং গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক কমেছে ১৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৬৯টির দাম কমেছে এবং ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।