Home আইন আদালত কারাবন্দী ফাঁসির আসামির আবেগঘন চিঠি, সাজা কমে যাবজ্জীবন

কারাবন্দী ফাঁসির আসামির আবেগঘন চিঠি, সাজা কমে যাবজ্জীবন

90
0
SHARE

প্রথম স্ত্রী হত্যার দায়ে ফাঁসির দন্ড মাথায় নিয়ে ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে কনডেম সেলে বন্দী কুস্টিয়ার কুমারখালীর স্বপন কুমার বিশ্বাস। নিম্ন আদালতের ফাঁসির আদেশ রায় হাইকোর্টেও বহাল থাকায় তার বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এ অবস্থায় কারাগার থেকে তার মামলাটি পরিচালনার জন্য এক আবেগঘন চিঠি লিখলেন দেশ বরেণ্য ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের কাছে। কারাবন্দির চিঠি পেয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেনও সিদ্ধান্ত নিলেন বিনা পয়সায় ওই আসামির মামলা পরিচালনা করবেন। করলেনও তাই। আর এ মামলায় শুনানি শেষে সোমবার ওই আসামির ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার এক রায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত স্বপন কুমার বিশ্বাসের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন। একইসঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের পর স্বপন কুমারকে অবিলম্বে কনডেম সেল থেকে বের করে সাধারণ সেলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাকে সাজার ক্ষেত্রে রেয়াদ সংক্রান্ত আইনের সকল সুবিধা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বপন কুমার বিশ্বাসের পক্ষে বিনা পয়সায় মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। আসামিপক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আরেক আইনজীবী ছিলেন হাসিনা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

এদিকে ফাঁসির আসামির পক্ষে বিনা পয়সায় মামলা করায় অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আপনার এই কার্যক্রম আমরা লিখিত রায়ের মধ্যে উল্লেখ করবো। প্রধান বিচারপতি এরকম বিনা পয়সায় আরো মামলা পরিচালনার জন্য খন্দকার মাহবুব হোসেনের প্রতি আহ্বান জানান। জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আদালত দায়িত্ব দিলে তিনি এরকম মামলা করতে রাজি আছেন।

কারাবন্দির চিঠি

ফাঁসির দন্ড মাথায় নিয়ে কাশিমপুর কারাগারে বন্দী স্বপন কুমার ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই দেশ বরেণ্য ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের উদ্দেশ্যে এক আবেগঘন চিঠি লেখেন। চিঠিতে লেখা হয়,‘—কিভাবে বেঁচে আছি তা লিখে বোঝাতে পারব না। এটাকে ঠিক বেঁচে থাকা বা জীবন বলে না। এ জীবন আর সত্যিই আমার সহ্য হচ্ছে না। আপনি মহানুভব, তাই দয়া করে আমাকে আপনার নিজ সন্তান মনে করে আমার জীবনটাকে বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই।–।’ এই চিঠি খন্দকার মাহবুব হোসেন হাতে পৌছে একইবছরের ৩০ নভেম্বর। এরপরই বিনা পয়সায় স্বপন কুমারের পক্ষে মামলা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন খন্দকার মাহবুব।

জানা যায়, রাজবাড়ির পাংশা উপজেলার পুরাতন বাজার এলাকার সুকুমার ঘোষের মেয়ে স্বপ্না রানী ঘোষকে বিয়ে করেন কুস্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর গ্রামের শংকর কুমার বিশ্বাসের ছেলে স্বপন কুমার বিশ্বাস। পরবর্তীতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি এনজিওতে চাকরির সুবাদে সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করেন স্বপন কুমার। এই খবর পাবার পর স্বপ্না রানী নীলফামারীর সৈয়দপুরের নয়াটোল গ্রামে স্বামীর ভাড়া বাড়িতে হাজির হন। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয়। এরই জেরে ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর রাতে স্বপ্না রানীকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখেন স্বপন। পরদিন ১৭ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হলেও পরবর্তীতে একইবছরের ২৮ নভেম্বর স্বপনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। পুলিশ স্বপন কুমারকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় বিচার শেষে ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর স্বপন কুমারকে মৃত্যুদণ্ড দেন নীলফামারীর আদালত। এই রায় অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। আর কারাবন্দী স্বপন কুমারও রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। উভয় আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল হাইকোর্ট স্বপন কুমারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন স্বপন কুমার। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।