Home আইন আদালত জীবন বীমার নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলে হাইকোর্টের রুল

জীবন বীমার নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলে হাইকোর্টের রুল

56
0
SHARE

প্রশ্নফাঁস, দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেনের দায়ে অভিযুক্ত জীবন বীমা কর্পোরেশনের গত ৩ এবং ৪ সেপ্টেম্বরের নিয়োগ পরীক্ষা কেন বাতিল করা হবে না, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। আইন ও অধিকার ফাউন্ডেশনের দায়ের করা এক রিট মামলায় বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান এবং বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।

 

এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা কর্পোরেশনের কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকও তদন্ত শুরু করেছে। জীবন বীমা কর্পোরেশনের মতিঝিলস্থ প্রধান কার্যালয়ে এ ব্যাপারে অভিযানও পরিচালনা করেছে দুদকের একটি টিম। দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে আগত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক, সকেজা, ঢাকা-১ এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী-এর নেতৃত্বে গত ১৩ সেপ্টেম্বর এ অভিযান পরিচালিত হয়।

 

ফলে সবকিছু মিলিয়ে জীবন বীমা কর্পোরেশনের বহুল কেলেঙ্কারি, জাল-জালিয়াতির ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা ছাড়া আর গত্যন্তর থাকছে না। বিশেষ করে হাইকোর্টের রুল আদেশের কারণে বিপাকে পড়েছে জীবন বীমা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই এ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হবে।

 

উল্লেখ্য, জীবন বীমা কর্পোরেশনের নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ঘুষ লেনদেন ও প্রশ্নফাঁসের আগাম খবর প্রকাশ করেছিলো শীর্ষনিউজ ডটকম। গত ৩১ আগস্ট শীর্ষনিউজ ডটকমে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে জীবন বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। কিন্তু তিনি মোটা অংকের অর্থৈর বিনিময়ে মন্ত্রণালয়কে ম্যানেজ করে সেই পরিস্থিতিতেই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে শীর্ষনিউজ ডটকমে আগাম প্রকাশিত তথ্যই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর উচ্চমান সহকারীর ১৬২ পদের যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তাতে ১৬২ জন চাকরিপ্রার্থীর প্রায় সকলেই শতকরা প্রায় একশ’ ভাগ নম্বর পেয়েছেন, যা শুধু অস্বাভাবিকই নয় নজিরবিহীনও। এই ১৬২ জন চাকরিপ্রার্থীকে আগে থেকেই গোপনে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির এমডি মো. জহুরুল হক। যে কারণে পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের মধ্যে ৮০ নম্বর পেয়েছেন এরা প্রায় সকলেই। উচ্চমান সহকারী পদের জন্য নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১,৩২,২৯২ জন চাকরিপ্রার্থীর অন্যদের কেউ ৬০ এর বেশি নম্বর পাননি। এ ঘটনা ফাঁস হবার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন চাকরিপ্রার্থীরা। জীবন বীমা কর্পোরেশনের দুর্নীতিবাজ এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং তাদের অপসারণ, গ্রেফতার ও পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচিও পালন করেন তারা।

 

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বরাবর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগও দেয়া হয় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে। মো. মনিরুজ্জামান জোহা নামে জনৈক চাকরিপ্রার্থী  “অভিনব পদ্ধতিতে জীবন বীমা কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জহুরুল হক লিখিত পরীক্ষার প্রায় ৮দিন পূর্বে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সম্ভাব্য চাকরিপ্রত্যাশীদের নিকট থেকে পিয়ন ৮ লক্ষ, নিম্নমান সহকারী ৯ লক্ষ এবং উচ্চমান সহকারী ১০ লক্ষ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে তিন লক্ষ চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা প্রসঙ্গে” শিরোনামে লিখিত ওই অভিযোগটি দেন।

 

গত ৫ সেপ্টেম্বর মো. মনিরুজ্জামান জোহা দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর এই অভিযোগপত্রটি দেন। দুদক এই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে দুদক টিম উক্ত অফিস সরেজমিন পরির্দশনপূর্বক পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র এবং এ সংক্রান্ত কিছু রেকর্ডপত্র সংগহ করে। কিন্তু এতো কিছুর পরও জীবন বীমা কর্পোরেশনের দুর্নীতিবাজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহুরুল হক থেমে থাকেননি। অবৈধ পন্থায় তড়িঘড়ি করে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে হাইকোর্টের রুলের পর তার ওই অপচেষ্টা ভেস্তে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।