Home Blog Page 3539

গার্মেন্ট মালিকের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সড়ক ছেড়েছেন

0

বিজিএমইএ ও গার্মেন্ট মালিকের আশ্বাস পেয়ে শ্যামলী বাস টার্মিনাল এলাকায় আলিফ অ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকরা সড়ক ছেড়েছেন। হঠাৎ করেই কারখানা বন্ধ করায় তারা সড়ক অবরোধ করেছিলেন।

আজ বুধবার দুপুর ১২টায় পুলিশের মধ্যস্থতায় মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসে তাদের একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন।

এর আগে বুধবার সকাল আটটার দিকে শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়কে যানচলাচল শুরু হয়। এরপর সকাল নয়টার দিকে ফের সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অফিসযাত্রীদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার পর ওই সড়কে যান চলাচল এখন স্বাভাবিক হয়েছে বলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জি জি বিশ্বাস জানিয়েছেন।

জানা যায়, ঈদের ছুটির পর আজকে আলিফ অ্যাপেয়ারেলস ১, ২ ও আলিফ গার্মেন্টস নামের এ তিনটি কারখানা খোলার কথা ছিল। সে অনুযায়ী শ্রমিকরা কারখানায় আসার পর দেখে যে, ফটকে কারখানা বন্ধের নোটিশ ঝোলানো। এরপর তারা সড়ক অবরোধ করে।

বর্তমানে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগে এক ধরনের বিচারিক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে : হাইকোর্ট

0

শিশু আইনের এক মামলায় দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, দৈনন্দিন বিচারিক কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে এ কথা উচ্চারণে আমাদের দ্বিধা নেই যে, শিশু আইন ও আদালত নিয়ে বর্তমানে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগে এক ধরনের বিচারিক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শিশু আইনে সাংঘর্ষিক অবস্থা, বিদ্যমান অসংগতি, অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি অবিলম্বে দূর করা প্রয়োজন। আদালত এটাও প্রত্যাশা করছে যে, এ লক্ষ্যে সরকার দ্রুততার সঙ্গে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সরকার শিশু আইন সংশোধন অথবা শিশু আইন ২০১৩-এর ধারা ৯৭-এর বিধান মূলে গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা অস্পষ্টতা ও অসংগতি দূর করতে পারে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জনাব মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। পুরান ঢাকার লালবাগে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে মো. ওসমান হত্যা মামলার আসামি শিশু মো. হৃদয়ের জামিন আবেদন বিষয়ক এক মামলায় হাইকোর্ট গত পহেলা আগস্ট এ রায় দেন। আজ বুধবার এর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আসামি শিশু হৃদয়ের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এম মশিউর রহমান। আদালত হৃদয়ের জামিন মঞ্জুর করেন।
এই রায় ও আদেশের কপি প্রয়োজনীয় অবগতি ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালত/ট্রাইব্যুনালসহ সমাজকল্যাণ ও আইন সচিব এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রায়ে ভবিষ্যতে জটিলতা এড়াতে ৭ দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশনাগুলো হলো-

১. সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কেবলমাত্র মামলার তদন্ত কার্যক্রম তদারকী করবেন এবং এ সংক্রান্তে নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় আদেশ এবং নির্দেশনা প্রদান করবেন;

২. রিমান্ড সংক্রান্ত আদেশ শিশু আদালতেই নিষ্পত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু (ভিকটিম এবং সাক্ষী) বা আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর জবানবন্দী সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট লিপিবদ্ধ করতে পারবেন;

৩. তদন্ত চলাকালীন সময়ে আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত শিশু-কে মামলার ধার্য তারিখে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজিরা হতে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে;

৪. তদন্ত চলাকালে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুর রিমান্ড, জামিন, বয়স নির্ধারণসহ অন্তবর্তী যেকোন বিষয় শিশু আদালত নিষ্পত্তি করবে এবং এ সংক্রান্ত যেকোন আবেদন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দাখিল হলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিষ্ট্রেট নথিসহ ‌ওই দরখাস্ত সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে প্রেরণ করবেন; এবং সংশ্লিষ্ট শিশু আদালত ঐ বিষয়গুলি নিষ্পত্তি করবে;

৫. অপরাধ আমলে গ্রহণের পূর্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল শিশু আইনের অধীনে কোন আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে ‘শিশু আদালত’ হিসেবে আদেশ প্রদান করবে এবং এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞ বিচারক শিশু আদালতের বিচারক হিসেবে কার্য পরিচালনা এবং শিশু আদালতের নাম ও সিল ব্যবহার করবেন;

৬. আইনের সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি হলো এই যে, আইন মন্দ বা কঠোর হলেও তা অনুসরন করতে হবে, যতক্ষন পর্যন্ত তা সংশোধন বা বাতিল না হয়। নালিশী মামলার ক্ষেত্রে শিশু কর্তৃক বিশেষ আইনসমূহের অধীনে সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিশেষ আদালত বা ক্ষেত্রমত, ট্রাইব্যুনাল শিশু আইনের বিধান ও অত্র রায়ের পর্যবেক্ষণের আলোকে অভিযোগ গ্রহণের পর প্রয়োজনীয় আইনি কার্যক্রম গ্রহণের পরে অপরাধ আমলে গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কাগজাদি (নথি) সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট প্রেরণ করবে; অতঃপর ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধ আমলে গ্রহণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান এবং অপরাধ আমলে গ্রহণ করলে পরবর্তীতে কাগজাদি বিচারের জন্য শিশু আদালতে প্রেরণ করবেন;

এবং ৭. শিশু আইনের প্রাধান্যতার কারণে বিশেষ আইনসমূহের অধীনে জি.আর মামলার ক্ষেত্রে শিশু কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের জন্য পৃথক পুলিশ রিপোর্ট দেওয়ার বিধান থাকায় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে অপরাধ আমলে গ্রহণ করবেন।

রায়ে বলা হয়, আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, শিশু আইনের ১৫ক নম্বর ধারা, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৭ নম্বর ধারা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ২৭ নম্বর ধারা এবং ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৮ নম্বর ধারাসহ বিভিন্ন বিশেষ আইনের সঙ্গে শুধু অসংগতিপূর্ণ নয়, সাংঘর্ষিকও বটে।

আদালত বলেন, শিশু আইনের প্রাধান্যতার কারনে যদি যুক্তি দেওয়া হয় যে, থানার দায়েরকৃত মামলা অর্থাৎ জি.আর মামলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধ আমলে গ্রহণ করবেন তাহলে সেটা হবে শিশু আইন প্রনয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, একই আইনের অধীনে শিশুর বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গ্রহণ করবেন ম্যাজিস্ট্রেট, আর প্রাপ্ত বয়স্কদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল বা ক্ষেত্রমত, আদালত, যা বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অদ্ভুত বা অস্বাভাবিক একটি প্রস্তাবনা।

আদালত রায়ে বলেছেন, শিশু আইন-২০১৩ প্রনয়নের মূল লক্ষ্যই ছিল শিশু (আসামি, ভিকটিম ও সাক্ষী)-দের সর্বোত্তম স্বার্থ সংরক্ষণ করা। আদালতে শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, দেশের শিশু আদালতসমূহে এখন পর্যন্ত শিশু বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে শিশু আদালতের বাহিরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসমূহে এই মূহূর্তে শিশু বান্ধব পরিবেশ তৈরী করা নিঃসন্দেহে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এটা বাস্তবতা যে, শিশু আইন-২০১৩-এর ১৬ক, ১৫ক এবং ১৬(৩) ধারা সংযোজিত হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের সংশয়, বিভ্রান্তি এবং সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে শিশুদের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সৃষ্ট সংশয়, বিভ্রান্তি ও অসংগতি দূর করা অতি জরুরি।

আদালত রায়ে বলেন, এখানে উল্লেখ করা আরো প্রাসঙ্গিক হবে যে, শিশু আইনের অধীনে কোনো আদেশ প্রদানকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের নাম, সিল ও পদবী ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। আমরা লক্ষ্য করছি যে, বিচার পূর্বকালীন সময়ে বিভিন্ন আদেশ প্রদানকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-এর নাম, সিল ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সংক্ষুব্ধ পক্ষের উচ্চতর আদালতে আসার ক্ষেত্রে এখতিয়ার নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

২১শে আগস্ট যেভাবে রক্ষা পেয়েছিলেন শেখ হাসিনা

0

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট শনিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন সিনিয়র নেতারা। দলটির প্রধান এবং তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা ছিলেন ঐ সমাবেশের প্রধান অতিথি।

আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে রাস্তায় একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। বিকেল তিনটা থেকে দলটির কিছু মধ্যম সারির নেতা বক্তব্য দেয়া শুরু করেন।

বিকেল চারটার দিকে শুরু হয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য দেয়ার পালা। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তখনও এসে পৌঁছাননি। দলের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকরা শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় ছিলেন।

ঐ সমাবেশে তখন উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের তৎকালীন সদস্য ও বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী আমির হেসেন আমু।

২০১১ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘নেত্রীর বক্তব্য শেষ হবার সাথে সাথে হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনলাম। প্রথমে আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, এদিক-ওদিক তাকালাম। তখন চারপাশে চিৎকার শুনতে পেলাম।’

এভাবে দফায়-দফায় বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। সমাবেশে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রথমে বুঝতে পারেননি যে এটি ছিল গ্রেনেড হামলা। অনেকেই ভেবেছিলেন বোমা হামলা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে আঁচ করেছিলেন।

যখন গ্রেনেড হামলা শুরু হলো, তখন মঞ্চে বসা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনার চারপাশে ঘিরে মানব ঢাল তৈরি করেন – যাতে তাঁর গায়ে কোন আঘাত না লাগে।

যেসব নেতা শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানব ঢাল তৈরি করেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। তখন হানিফের মাথায় গ্রেনেডের আঘাত লেগেছিল। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের শেষের দিকে তিনি মারা যান।

গ্রেনেড হামলার পর বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নেতা-কর্মীরা জীবন দিয়ে তাঁর জীবন রক্ষা করেছিলেন।

কান্না জড়িত কণ্ঠে বিবিসিকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার নেতা-কর্মীরা সবাই আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল যে অনেকেই ইনজিউরড (আহত) হয়েছে। তাদের রক্ত এখনও আমার কাপড়ে লেগে আছে। আমার নেতা-কর্মীরা তাদের জীবন দিয়েই আমাকে বাঁচিয়েছে।’

ঐ গ্রেনেড হামলায় ২৪জন নিহত, আর আহত হয় আরও অনেকে।

গ্রেনেড হামলার দিন বিবিসি বাংলার জন্য আওয়ামী লীগের ঐ সমাবেশের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তৎকালীন সংবাদদাতা হাসান মাসুদ।

ঘটনার ভয়াবহতা দেখে তিনি রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে যান তখন।

হাসান মাসুদের বর্ণনা ছিল এ রকম- ‘আমি প্রথম যে দৃশ্যটা সেখানে দেখেছিলাম আইভি রহমানের। আমি ওনাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। উনি বসা, চোখ দুটো খোলা, নির্বাক। ঠিক মঞ্চের সামনে দুপাশে দুজন লোক তাকে ধরে রেখেছে।’

‘আইভী রহমানকে দেখে আমি ঘটনার ভয়াবহতা বুঝে গেলাম। মঞ্চের চারপাশে প্রচুর স্যান্ডেল-জুতা পড়ে ছিল। প্রচুর নিহত ও আহত মানুষ ছিল চারপাশে। কারো হাত নাই, কারো পা নাই।’

হাসান মাসুদের বর্ণনা অনুযায়ী ১২টির বেশি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়েছিল। আরো কয়েকটি গ্রেনেড অবিস্ফোরিত অবস্থায় পড়ে ছিল।

গ্রেনেড হামলায় আহত অনেকেই এখনও শরীরে আঘাত নিয়ে বেঁচে আছেন। এদের একজন নাসিমা ফেরেদৗসি। তাঁর শরীরে এখনও দেড় হাজারের মতো গ্রেনেডের স্প্লিনটার রয়েছে। শরীরের ভেতর এসব স্প্লিনটার নিয়ে যন্ত্রণা-কাতর জীবন পার করছেন নাসিমা ফেরদৌসি।

ঘটনার দিন মঞ্চের খুব কাছেই অবস্থান করছিলেন নাসিমা ফেরদৌসি।

২০১১ সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নাসিমা ফেরদৌসি বলেন, ‘হঠাৎ করে এক বিকট আওয়াজ শুনলাম। এরপর আরেকটি আওয়াজ। আমি দৌঁড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আমরা পা নড়ছিল না।’

‘দ্বিতীয় আওয়াজের সাথে সাথে দেখলাম আমার শরীর রক্তে ভেসে গেছে। এরপর আমি সেন্সলেস (অজ্ঞান) হয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে দেখলাম লাশ আর লাশ। আমি বলছিলাম বাঁচাও-বাঁচাও।’

কিছুক্ষণ পরে আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন নাসিমা ফেরদৌসি। আশপাশের সবাই ভেবেছিল নাসিমা ফেরদৌসি মারা গেছে। তাকে মৃত ভেবে একটি মৃতদেহবাহী ট্রাকে তোলা হয়। তখন আবারও জ্ঞান ফিরে আসে নাসিমা ফেরদৌসির। ব্যথায় চিৎকার করে তিনি আবারও বলতে থাকেন ‘বাঁচাও-বাঁচাও’।

গ্রেনেড হামলায় নাসিমা ফেরদৌসির দুটো পা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর তার পা দুটো কোন রকমে টিকে যায়। কিন্তু চার বছর তাকে কাটাতে হয়েছে হুইল চেয়ারে।

ভয়ানক ঐ দিনের কথা মনে করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নাসিমা ফেরদৌসি।

২১শে আগস্টের হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আহতদের সাহায্যে এগিয়ে না এসে পুলিশ উল্টো তাদের হেনস্থা করেছে। সে সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সরকারের ভূমিকা নিয়েও নানা বিতর্ক এবং প্রশ্ন রয়েছ।

ঘটনার পর বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা যখন আহতদের সাহায্য করতে গেছে, ঠিক সে সময় পুলিশ উল্টো টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ ও তাদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, আহতদের সাহায্য করতে এগিয়ে না এসে পুলিশ যখন উল্টো টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ ও গ্রেফতার করতে শুরু করলো, তখন বুঝতে পারা যায় যে এ ঘটনা তাদের মদদে হয়েছে।

এই মামলার বিচার কাজ এখনও নিম্ন আদালতে চলছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, গ্রেনেড হামলার সেই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে দুই প্রধান দলের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, তাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার জন্যই সেদিনের গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল।

এই ধারণার সাথে অনেকেই একমত পোষণ করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্ক এখন সবচেয়ে তিক্ত, যার একটি বড় কারণ হচ্ছে ২১শে অগাস্টের গ্রেনেড হামলা। গ্রেনেড হামলার ঘটনা দুই দলকে আরও বেশি বিপরীত মেরুতে ঠেলে দিয়েছে।

গ্রেনেড হামলার সময় এবং তারপরের তদন্ত নিয়ে পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় প্রশ্ন উঠেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে।

জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই হামলার ঘটনায় পুনরায় তদন্ত হয়।

সেখানে নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর নাম আসে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে পুনরায় তদন্ত হয়।

ঐ তদন্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপি’র অন্যতম শীর্ষ নেতা তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সহ বেশ কয়েকজন পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এবং পুলিশের সাবেক তিনজন মহাপরিদর্শক বা আইজিপির নাম আসে।

বিএনপি অবশ্য এই তদন্তকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক’ বলে বর্ণনা করে।

বাংলাদেশের ইতিহাসেএখন পর্যন্ত নৃশংস সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার একটি। ঐ ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাবও ফেলেছে।

আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, কারণ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে এবং দেশের মানুষের শান্তি চায়

0

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি জামায়াতের পৃষ্টপোষকতা ছাড়া ২১ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটনা সম্ভব না এটা আজকে প্রমাণিত সত্য। এটা নিয়ে আমরা একটা রায়ও পেয়েছি।

তিনি বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বেঁচে থাকার কথা নয়। ওরা ভাবেনি যে বেঁচে থাকবো। অনেক ছোট ছোট ঘটনা আমি জানি। যারা হামলা করেছে তারা এক জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে ফোন করেছে যে আমি মারা গেছি কি না।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন। ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত ও আহতদের স্মরণে এ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন আমি ওই এলাকা ছেড়ে আসার সাথে সাথে শুরু হয় লাঠিচার্জ। সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে পানি দিয়ে আলামত মুছে ফেলা হয়। আমি জানতে পেরে নানককে বলি, আলামত নষ্ট করছে তোমরা ওখানে যাও। আমাদের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে গ্রেনেড হামলার স্থলগুলোতে লাল পতাকা পুঁতে আলামত রক্ষার চেষ্টা করে। অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল। সেটি সেনা অফিসার নিয়ে যায়, সে সেটা রাখতে চেয়েছিল বলে সে চাকরি হারায়। কোনো আলামত না রাখার চেষ্টা তারা করেছিল। এ হামলা সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, সাংবাদিকরা অনেক কিছু বের করে এনেছেন। এটিও বের করতে পারেন, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ৫ নম্বরে তার শ্বশুরবাড়িতে আগের ১০ মাস থাকতো। ঠিক ১ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টের বাসায় কেন চলে যায়, এ সময় ওখানে বসে বসে তার কাজ কী ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, ওই দিন বাসায় পৌঁছে আমি সবার খোঁজ নেওয়া শুরু করলাম। আহতদের উদ্ধার করতে কাউকে আসতে দেওয়া হয়নি। ঢাকা মেডিক্যালে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছিল। আমাদের যারা সমর্থক তারাই সেদিন কাজ করেছে, আমাদের লোকজন রক্ত দিয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি সারা ঢাকা শহরের হাসপাতালের খোঁজ নিয়েছি। আমি খোঁজে খোঁজে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, পরে বিদেশে পাঠিয়েছি।

তিনি বলেন, শান্তিনগরের ক্লিনিকে সাহারা আপাকে খুঁজে পেলাম। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো, শেখ হাসিনা হ্যান্ডব্যাগে গ্রেনেড এনে নিজে মেরেছে। আমরা স্যুইসাইড করতে গিয়েছি যেন। অতগুলো গ্রেনেড হাতে করে নিয়ে যাওয়া সোজা কথা নয়। আমি এক্সপার্ট হলাম কবে? ওরা কী না পারে। মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দিলো।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, কারণ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে এবং দেশের মানুষের শান্তি চায়। কিন্তু যখনই আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যায় তখনই বিএনপি গণতন্ত্রের নামে হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়। বিএনপি যখন গণতন্ত্রের কথা বলে তখন আমার খারাপ লাগে। কারণ যারা গণন্ত্রের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না।

তিনি বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে। পঙ্গু করেছে। অত্যাচার করেছে। চোখ তুলেছে। পা কেটে দিয়েছে। কত পরিবারকে ধ্বংস করেছে। ঠিক হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী একাত্তরে আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে, হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ঠিক বিএনপি একইভাবে। এখানে জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। এরশাদও সেই একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। খালেদা জিয়াও সেই একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। তাদের একটাই উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগ যেন কখনো ক্ষমতায় আসতে না পারে।

সভায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আলোচনায় আরো অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, নির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি আবুল হাসনাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন

0

আজ বুধবার প্রথমে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে শহীদদের স্মরণে স্থাপিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা জানান।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত বেদিতে জড়ো হন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও ২১ আগস্টে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরউল্লাহ, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
পরে ১৪ দলের পক্ষ থেকেও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। তাদের স্মরণে প্রতি বছর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়।
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। বুধবার সকালে ‘গ্রেনেড হামলা দিবস’ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হয়।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত

0

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। এ জন্য উচ্চ আদালতে হওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমাদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। অবশ্যই উচ্চ আদালতে যাব। এ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের জবানবান্দিতে আছে তারেক রহমানের নির্দেশ মেনেই তারা সেদিন অপারেশন চালিয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ডের যেমন বিচার হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডদেরও সর্বোচ্চ সাজা হতে হবে।’
আজ বুধবার (২১ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্টে নিহতদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা উচ্চ আদালতে যাব। হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের বক্তব্যে আছে তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা সেদিন হামলা চালিয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের যেমন বিচার হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডেরও এমন বিচার হতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সে দিন আওয়ামী লীগ সভাপতি আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মূল টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছিলো। আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। তিনি যখন বেঁচে আছেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হবে এ বাংলার মাটিতে। বাংলার মানুষ এর জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আজকের দিনে আমাদের শপথ রাজনীতিতে সন্ত্রাস ও সম্প্রদায়িকতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মোকাবিলা করব।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৫ আগস্ট আর ২১ আগস্টের হত্যাকা- একই সূত্রে গাঁথা। ২০০৪ সালের এই দিনে তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান টার্গেট করে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে সন্ত্রাসীদের দিয়ে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে রক্তস্রোত বইয়ে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সরকারি দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে যে কর্মসম্পর্ক থাকা দরকার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে সেটা চিরদিনের জন্য শেষ করে দিয়েছে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর পরেও খালেদা জিয়াকে গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া কি ব্যবহার করেছিলো সেটা দেশের মানুষ জানে। খালেদা জিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পর শেখ হাসিনা পুত্র হারা মাকে সান্তনা দিতে তার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংলাপের দরজাও বন্ধ করে দিয়েছে বিএনপি।
এর আগে বেদিতে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তার পর জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ অন্যান্য দল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক তৈরির কাজ দুই থেকে চার মাসের মধ্যে শেষ হবে

0

তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষাণা হয়েছে। এখন রায় বাস্তবায়নের পালা। রায়ে আসামিদের কারও কারও ফাঁসি, কারো কারো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হলে ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি করতে হয় উচ্চ আদালতে। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের বেলায়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য। ডেথ রেফারেন্সের শুনানির আগে সরকারকে এ মামলার পেপারবুক তৈরি করে দিতে হয়। পেপারবুকে মামলার খুঁটিনাটি সব বিষয় থাকে। এটি তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। দুই-চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এর পরই শুনানির জন্য মামলাটি কার্যতালিকায় উঠবে। আশা করছি এ বছরের মধ্যে এসব কাজ পুরোপুরি করা সম্ভব হবে।’
এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা সব সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যারা বিদেশে আছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি এবং ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। সেখানে অনেক সময় কিছু জটিলতা হয়, সেইসব জটিলতা আমরা নিরসন করার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করি, এ রায় কার্যকর করার জন্য তাদের ফিরিয়ে আনা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে।’
কী প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এর থেকে বেশি আর কিছু বলব না।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ মামলার বিচার শেষ করার দায়িত্ব আমাদের। তাদের (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী) যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, বাংলাদেশকে যারা দ্বিতীয়বারের মতো হত্যা করতে চেয়েছিল, তাদের সঠিক সাজা দেয়ার ব্যাপারে আদালতকে সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেই দায়িত্ব পালন করব।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাটি চালানো হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার।

ফের কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি

0

সম্প্রতি ভারতীয় কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য চরম উত্তজনা চলছে। এদিকে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি বিস্ফোরক ও অত্যন্ত জটিল বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসাথে ফের কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প এ কথা বলেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, খুব জটিল একটা জায়গা কাশ্মীর । সেখানে হিন্দু আছে, মুসলিম আছে। তাঁরা একসঙ্গে খুব ভালো আছে এমনটা আমি বলতে পারবো না। বর্তমানে এটাই পরিস্থিতি।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, ফ্রান্সে আসন্ন জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হবে।

তিনি বলেন, সেই বৈঠকে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ট্রাম্প বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে সাহায্য করছি আমরা। এই দুই দেশের মধ্যে প্রচুর সমস্যা রয়েছে। আমি মধ্যস্থতা করে বা অন্য কিছু করে সবদিক দিয়ে চেষ্টা করব। এটা জটিল পরিস্থিতি। ধর্ম নিয়ে অনেক কিছু করার আছে। ধর্ম একটা জটিল বিষয়।

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি

আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ

0

কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে এবার আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। মঙ্গলবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, সব আইনি দিক বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলসহ নয়াদিল্লির সাম্প্রতিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করে এরই মধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপন করেছিল ইসলামাবাদ ও বেইজিং।

কিন্তু কাশ্মীর যে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সে ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিল নয়াদিল্লি। ফলে এ ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদ শেষ পর্যন্ত আর নাক গলাতে রাজি হয়নি। তাতে সন্দেহাতীতভাবেই নাক কাটা গেছে পাকিস্তানের।

ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, নিজেদের মুখ বাঁচাতেই এখন আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা বলছে ইসলামাবাদ। শেষ পর্যন্ত তারা তা করে কিনা, তা দেখার অপেক্ষায় থাকবে দক্ষিণ অংশ।

কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর গত ৬ আগস্ট পাকিস্তানের সংসদের দুই সভার যৌথ অধিবেশন ডেকেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সে দিনই তিনি জানিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে সব রকম আন্তর্জাতিক মঞ্চে যাবে ইসলামাবাদ।

পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, যৌথ অধিবেশনে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি মতোই এগোচ্ছে পাক প্রশাসন।

তবে ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, কাশ্মীরের জন্য ইমরান খানের যত না উদ্বেগ, তার বেশি উদ্বেগ নিজের গদি নিয়ে। ঘরোয়া রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য ভারত বিদ্বেষী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে চাইছেন তিনি।

পদত্যাগ করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপে কন্টে

0

ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপে কন্টে পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার নিজেই সেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তিও সালভিনি প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে আস্থা ভোটের কথা বলেছিলেন আরো ১২ দিন আগে। অবশেষে আজ মঙ্গলবার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন গুইসেপে।

পদত্যাগের আগে গুইসেপে কন্টে বলেন, সালভানির সিদ্ধান্তের জেরে এই দেশের এবং দেশের অর্থনীতির বড় ধরনের পরিণতি ঘটবে।

পরে তিনি বলেন, এই সরকার এখানেই কার্যক্রম শেষ করছে।

যদিও তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। এটা এখন নির্ভর করবে প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লার সিদ্ধান্তের ওপর।

এদিকে সালভানির দল থেকে নতুনভাবে নির্বাচনের আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতালির ডানপন্থী দলগুলোও নতুনভাবে নির্বাচনের কথা বলছে। তবে জোট গঠন করে পার্লামেন্টে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে নতুনভাবে সরকার গঠনের অনুমতি দিতে পারেন মাত্তারেল্লা। এমনকি তত্ত্বাবধায় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়েও নতুন নির্বাচন করতে পারবেন তিনি।