লজ্জার হারে সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ
ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার জন্য লক্ষ্য ছিল ২৩৯ রানের। এই লক্ষ্য পাড়ি দেয়া খুব বেশি কঠিন কিছু নয় স্বাগতিকদের। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল লঙ্কানরা।
দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে লঙ্কানরা ৪৪.৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে। ৪৪ মাস পর কোনো ওয়ানডে সিরিজ জিতলো শ্রীলঙ্কা। আগামী ৩১ জুলাই সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলতে নামবে তামিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
রোববার (২৮ জুলাই) তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি কলম্বোয় বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটায় শুরু হয়।
দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে টাইগার দলপতি তামিম ইকবাল ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তুলেছে ২৩৮ রান। ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি পাননি মুশফিক। ৯৮ রানে অপরাজিত থাকেন। তার ১১০ বলে সাজানো ইনিংসে ছিল ৬টি চার আর একটি ছক্কার মার।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে এলবির ফাঁদে পড়েন সৌম্য সরকার। নুয়ান প্রদীপের বলে বিদায় নেওয়ার আগে বাঁহাতি এই ওপেনার ১৩ বলে একটি বাউন্ডারিতে করেন ১১ রান। দলীয় ২৬ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ৩১ রানের মাথায় বিদায় নেন তামিম ইকবাল। ইসুরু উদানার বলে বোল্ড হওয়ার আগে বাঁহাতি এই ওপেনার ৩১ বলে দুই বাউন্ডারিতে করেন ১৯ রান। প্রথম পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ দুই ওপেনারকে হারিয়ে তোলে ৩৫ রান।
মুশফিকের সঙ্গে ২১ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন মোহাম্মদ মিঠুন। দলীয় ৫২ রানের মাথায় মিঠুনের বিদায়ে বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারায়। ২৩ বলে একটি বাউন্ডারিতে ১২ রান করে ফেরেন মিঠুন। ব্যক্তিগত ৮ রান করে মুশফিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৬ হাজার রান স্পর্শ করেন। ১৮ বলে ৬ রান করে আকিলা ধনাঞ্জয়ার বলে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলীয় ৬৮ রানে বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়। ৮৮ রানের মাথায় বিদায় নেন সাব্বির রহমান। রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে সাব্বির ১৯ বলে দুই বাউন্ডারিতে করেন ১১ রান।
দলীয় ১১৭ রানের মাথায় বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন। মুশফিকের সঙ্গে ২৯ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন তিনি। ইসুরু উদানার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ডানহাতি এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান ২৭ বলে করেন ১৩ রান। এরই মধ্যে টানা দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান মুশফিক। সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও করেছিলেন ৫০ রান। সিরিজের প্রথম ম্যাচে করেন ৬৭ রান। মুশফিকের সঙ্গে ৮৪ রানের জুটি গড়েন মেহেদি হাসান মিরাজ। ইনিংসের ৪৬তম ওভারে বিদায় নেন মিরাজ। ৪৯ বলে ছয়টি বাউন্ডারিতে মিরাজ করেন ৪৩ রান। তাইজুল করেন ৩ রান। তবে, শেষ ওভারে রানআউট হওয়ার আগে মুশফিকের সঙ্গে তাইজুল ৩০ রানের জুটি গড়েন।
বাংলাদেশ একাদশে একটিই পরিবর্তন, পেসার রুবেল হোসেনের জায়গায় এসেছেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। লঙ্কানদের পরিবর্তন দুটি। ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে খেলা লাসিথ মালিঙ্গার জায়গায় এসেছেন ইসুরু উদানা। আর থিসারা পেরেরার জায়গায় এসেছেন আকিলা ধনাঞ্জয়া।
১০ ওভারে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৩৯ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। ১০ ওভারে ৪২ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি লাহিরু কুমারা। আকিলা ধনাঞ্জয়া ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে ২টি উইকেট পান। ইসুরু উদানা ১০ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট। নুয়ান প্রদীপ ১০ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে পান দুটি উইকেট।
২৩৯ রানের টার্গেটে নেমে ম্যাচের ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে মেহেদি হাসান মিরাজের বলে আউট হন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনা। ওপেনিংয়ে নেমে ২৯ বল খেলে ১৫ রান করেন তিনি। ম্যাচের ২১তম ওভারের চতুর্থ বলে মোস্তাফিজের কাটার মারতে গিয়ে মিডঅনে তামিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেন দ্রুত রান করতে থাকা আভিস্কা ফার্নান্দো। আউট হওয়ার আগে ওপেনিংয়ে নেমে ৭৫ বল খেলে ৮২ রান করেন তিনি। একশোর উপর স্ট্রাইক রেটে রান তোলা এই ব্যাটসম্যানের ইনিংসে ছিল ৯টি চার ও দুটি ছয়ের মার।
ম্যাচের ২৫তম ওভারে ফের মোস্তাফিজের আঘাত। এবার কুশল পেরেরা সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। ৩৪ বল খেলে তিনটি চারের মারে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। কুশল মেন্ডিস আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তোলেন ৯৬ রান। ম্যাথিউস ৫৭ বলে ৫২ এবং মেন্ডিস ৭৪ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন।
মিরাজ ১০ ওভারে ৫১ রান খরচায় তুলে নেন একটি উইকেট। প্রায় তিন বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরলেও ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে তাইজুল ইসলাম কোনো উইকেট পাননি। মোস্তাফিজ ৮ ওভারে ৫০ রান দিয়ে পান দুটি উইকেট। শফিউল ইসলাম ৫ ওভারে ২৯ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। মোসাদ্দেক, সাব্বির, সৌম্য সরকারও কোনো উইকেট পাননি।