২০১০-১১ কাউন্টি মৌসুমে উস্টারশায়ারের হয়ে খেলে গিয়েছিলেন দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। উস্টারশায়ার যে তাঁর অবদান ভুলে যায়নি, তারই জ্বলন্ত প্রমাণ দেখা গেল ক্লাব মাঠের অনার্স বোর্ডে।
গ্রায়েম হিক প্যাভিলিয়ন উস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের খুব অভিজাত জায়গা। সাধারণত, সম্মানিত অতিথিরাই এই প্যাভিলিয়নে বসে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচগুলো উপভোগ করেন। এই কাউন্টি দলে বহু গ্রেট ক্রিকেটার খেলে গেছেন। যে দলে আছেন বাসিল ডি’ অলিভিয়েরা, আবদুল হাফিজ কারদার থেকে শুরু করে গ্লেন ম্যাকগ্রা, শোয়েব আখতার। খেলেছেন গ্লেন টার্নার, ইমরান খান কিংবা কপিল দেবের মতো গ্রেট। কিন্তু সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্যাভিলিয়নের নাম হিকের নামে কেন! ১৩৬টি প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি যার দখলে; যে রেকর্ড দেখলে ক্রিকেটের ‘সবকিছু’ ডব্লু জি গ্রেসও খানিকটা ঈর্ষা অনুভব করতেন, উস্টারশায়ার কাউন্টি নিজেদের এই সেরা সন্তানের নামে তো অভিজাত প্যাভিলিয়নের নাম দেবেই। কিন্তু তাই বলে উস্টারশায়ার কিন্তু তাঁর কোনো সন্তানকেই ভুলে যায়নি। যেমন ভুলে যায়নি এক বঙ্গসন্তানকে—সাকিব আল হাসান।
২০১০-১১ মৌসুমে সাকিব উস্টারশায়ারের পক্ষে খেলেছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক কিছুরই ‘প্রথম’ তিনি, ঠিক তেমনি ইংলিশ কাউন্টিতেও। হালে আইপিএল চালু হয়ে কিছুটা ফিকে হয়েছে, কিন্তু একটা সময় ক্রিকেটারদের মোটা আয় রোজগারের পথটা তো এই কাউন্টি ক্রিকেটই করে দিত। এমন কোনো গ্রেট নেই, যিনি একবার অন্তত ইংলিশ কাউন্টিতে ঢুঁ মারেননি। ক্রিকেটীয় উৎকর্ষের জন্য একটা সময় এই ইংলিশ কাউন্টিকেই শেষ কথা হিসেবে ধরে নেওয়া হতো, সাকিবও ইংলিশ কাউন্টিতে গিয়েছিলেন নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য আরও ধারালো করে তৈরি করতে। কে জানে, আজকের সাকিবের পেছনে হয়তো ইংল্যান্ডের উস্টারশায়ার কাউন্টির হয়ে খেলার একটা বড় অবদান আছে।
উস্টারশায়ার সাকিবের নামটি তাদের অনার্স বোর্ডে যত্নের সঙ্গে রেখে দিয়েছে। যেখানে আবদুল হাফিজ কারদার, গ্লেন টার্নার, বাসিল ডি অলিভিয়েরা, ইমরান, কপিলদের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে তাঁর নাম। উস্টারশায়ার কাউন্টির নিজেদের মাঠ ব্ল্যাকফিঞ্চ নিউরোডের ঠিক বাইরে দেশের জাতীয় পতাকার একমাত্র প্রতিনিধি হয়ে আছেন তিনি। অনার্স বোর্ডে সাকিবের নামের পাশে লাল-সবুজ পতাকাটাও যে আঁকা আছে!
সাকিব যেদিন উস্টারশায়ারে যোগ দিলেন, তখন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সঙ্গে উস্টারের মুখপাত্র হয়ে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে সদ্যই ‘অতীত’ হয়ে যাওয়া কোচ স্টিভ রোডস। তিনি তখন উস্টারশায়ারের ক্রিকেট পরিচালক। তিনি সাকিবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা সাকিব আল হাসানকে পেয়ে আনন্দিত। আমরা তাঁর কাছ থেকে আগুনঝরা কিছু পারফরম্যান্সই প্রত্যাশা করছি।’
সাকিব আগুনই ঝরিয়েছিলেন। ৮টি কাউন্টি ম্যাচে খেলে তিনি তুলে নিয়েছিলেন ৩৫ উইকেট। ব্যাট হাতেও তাঁর ছিল মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স। তবে সবচেয়ে গর্বের যে পারফরম্যান্স ছিল, সেটি লর্ডসে মিডলসেক্সের বিপক্ষে একটি ম্যাচে। সেটিতে সাকিব ৩২ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। মিডলসেক্স ক্রিকেটের তীর্থভূমিতে গুটিয়ে গিয়েছিল ৬৬ রানে!
উস্টারশায়ার কাউন্টি সাকিবকে আরও একটা বিশেষ রেকর্ডের কারণে আলাদা মর্যাদা দেয়। তিনি হচ্ছেন তৃতীয় উস্টারশায়ার সাবেক যিনি টেস্ট ক্রিকেটে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের নভেম্বরে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাকিব দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৮০ ও ৪৪ রান দিয়ে ৫টি করে ১০টি উইকেট নিয়েছিলেন। করেছিলেন একটু সেঞ্চুরি। এ দলে প্রথম দুই ক্রিকেটার হচ্ছেন ইয়ান বোথাম ও ইমরান খান। বোথাম ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত উস্টারশায়ারের পক্ষে খেলেছিলেন। তিনি ১৯৮০ সালে মু্ম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট পেয়েছিলেন। সত্তরের দশকে কিছুদিন এ কাউন্টিতে খেলা ইমরান এমন কীর্তি গড়েছিলেন ১৯৮৩ সালে ফয়সালাবাদে, ভারতের বিপক্ষে।
উস্টারশায়ারের জন্য সাকিব তো এক মধুর অনুভূতি আর স্মৃতির নাম। তাঁর নাম ক্লাবের অনার্স বোর্ড থাকবে—এ আর এমন কী!