Home জাতীয় ভার্চুয়াল কোর্টের সাহায্য নিতেই হবে : আইনমন্ত্রী

ভার্চুয়াল কোর্টের সাহায্য নিতেই হবে : আইনমন্ত্রী

64
0
SHARE

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, করোনা ভাইরাস আমাদেরকে কতদিনে ছেড়ে যাবে তা আমরা জানিনা। যদি করোনাভাইরাসের প্রকোপ আরও বাড়ে, তাহলে আমাদেরকে ভার্চুয়াল কোর্টের সাহায্য নিতেই হবে। কারণ বিচার ব্যবস্থার কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। স্বাধীন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য জনগণের আশা পূরণ করতেই হবে। আর করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে স্বাভাবিক আদালত স্বাভাবিকভাবেই চলবে। ভার্চুয়াল আদালত কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে বা বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে।

আইনজীবীদের জন্য ‘ভার্চুয়াল আদালত পদ্ধতি ব্যবহারে দক্ষতা উন্নয়ন’ শীর্ষক অনলাইন প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ মো. শফিউল আজম, নরসিংদীর জেলা জজ মোস্তাক আহমেদ, জিআইজেড বাংলাদেশ এর ‘রুল অফ ল’ প্রোগ্রামের প্রধান প্রমিতা সেনগুপ্ত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি যথাক্রমে অ্যাডভোকেট মো. শফিউল আলম ও অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান বক্তৃতা করেন।

ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা নিয়ে আইনজীবীদের কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ও নরসিংদী জেলার আইনজীবীদের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রায় দেড়মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হলো। আগামী ২৪ আগস্ট পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সকল জেলার সরকারি আইন কর্মকর্তা (জিপি-পিপি) ও সাধারণ আইনজীবীদের অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আইন ও বিচার বিভাগের সার্বিক তত্বাবধানে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড-এ কারিগরি সহায়তায় এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। ভার্চুয়াল আদালত চালু হলেও অধিকাংশ আইনজীবী ভার্চুয়াল আদালত পদ্ধতি সম্পর্কে কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তিগত সঠিক ধারণা না থাকায় আইন মন্ত্রণালয় এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আয়োজন করেছে।

মন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব এবং দেশের সকল অফিস ভার্চুয়ালের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ যদি ভার্চুয়ালের দিকে এগিয়ে না যায় তাহলে শুধু বিশ্বে নয় দেশেও পিছিয়ে থাকবে। আমরা সমালোচনার সম্মুখীন হবো। জনগণ আমাদের উপর আস্থা রাখতে চিন্তা করবে। সবকিছু বিবেচনা করেই ভার্চুয়াল আদালত সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে সরকার।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের আইনজীবীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে সরকার। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে অনেক আদালত বন্ধ হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার সেখানে একটি বিকল্প ব্যবস্থা করে আদালত চালাতে পেরেছে।

তিনি বলেন, এই আদালত পূর্ণাঙ্গভাবে চালাতে গেলে আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ ছাড়া, ভৌত অবকাঠামো গড়া ছাড়া ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে চালু করা সম্ভব না। সরকার প্রায় দুই হাজার ৮শ কোটি টাকার ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ভার্চুয়াল আদালতে জামিন শুনানি চলছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি স্বাভাবিক আদালতে আত্মসমর্পনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং আরও কিছু পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক আদালতে চালু হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে নিয়মিত আদালত বন্ধ। এ প্রেক্ষাপটে ভার্চুয়াল আদালত চালু করতে গত ৯ মে আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ নামে গেজেট প্রকাশ করে। এই অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আদালতকে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর পরদিন ১০ মে সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ এবং আইনজীবীদের জন্য ‘ভার্চুয়াল কোর্টরুম ম্যানুয়াল’ প্রকাশ করা হয়। এরপর ১১ মে থেকে ভার্চুয়াল আদালত কার্যক্রম শুরু হয়। যা অব্যাহত রয়েছে। এই অধ্যাদেশটিই বিল আকারে গত ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে পাশ করায় এটি এখন আইনে পরিণত হয়েছে।