Home জেলা সংবাদ নদীতে ডিম ছেড়েছে ৫১ শতাংশ ইলিশ : গবেষক

নদীতে ডিম ছেড়েছে ৫১ শতাংশ ইলিশ : গবেষক

120
0
SHARE

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে চলা ২২ দিনের মা ইলিশ অভয়াশ্রম কার্যক্রমে ৫১.২ শতাংশ মা ইলিশ নদীতে ডিম ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রখ্যাত ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান।

অভয়াশ্রমের সময়টাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অভিযান সফল হওয়ায় এ বছর নদীতে রেকর্ড পরিমাণে ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ।

আগামী মৌসুমে নতুন করে আরও প্রায় ৩৭ হাজার ৮শ’ কোটি ইলিশের পোনা (জাটকা) নদীতে উৎপন্ন হবে বলে আশা করি। কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে পারলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী এই ইলিশ গবেষক।

আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমা ও অমাবস্যাকে কেন্দ্র করে নদীতে ডিম ছাড়ে মা ইলিশ।

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে গত ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় জেলার নদীগুলোতে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকার।

এই সময়টাতে নদীতে মাছ ধরা, পরিবহন, বাজারজাতকরণ সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল।

মৎস্য বিভাগ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও পুলিশের সহায়তায় মাছেদের অভয়াশ্রম নিশ্চিতে কাজ করেছে। তবুও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক অসাধু জেলে এই সময়টাতে ইলিশ নিধন করেছে।

ইলিশ গবেষক ড. আনিস বলেন, ইলিশ মাছ পরিভ্রমণ স্বভাবের। প্রজননের সময়টাতে ইলিশ সাগর ছেড়ে সাগর মোহনা ও নদ-নদীতে ছুটে আসে। প্রজননের মৌসুমে ইলিশের অভয়াশ্রম কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে প্রতিবছর দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর সঠিক সময় ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করায় এবং নদীতে ভালো অভিযান হওয়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার সর্বোচ্চ পরিমাণে ইলিশ ডিম ছেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যায় প্রতি বছরই মা ইলিশের ডিম ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০১৬ সালে ৪৩.৪৫ পারসেন্ট, ২০১৭ সালে ৪৬.৪৭ পারসেন্ট, ২০১৮ সালে ৪৭.৭৫ পারসেন্ট এবং ২০১৯ সালে ৪৮.৯২ পারসেন্ট ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। এ বছর ৫১.২ পারসেন্ট মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২ পারসেন্টেরও বেশি ইলিশ ডিম ছেড়েছে।

মৎস্য গবেষকদের ৩টি গ্রুপ যৌথভাবে কাজ করে এই ফলাফল নিশ্চিত করেছেন বলে জানান তিনি।

ড. আনিস বলেন, এ বছর যে পরিমাণে ডিম ছেড়েছে তার ১০ পারসেন্টও টেকানো গেলে আগামী মৌসুমে প্রায় ৩৭ হাজার ৮শ’ কোটি জাটকা পেতে চলছি আমরা।

আগামী মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমে অভিযান সফল করা গেলে দেশ ইলিশের প্রাচুর্যে ভড়ে উঠবে। এ বছর দেশে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। আসন্ন জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারলে দেশে ইলিশের উৎপাদন সাড়ে ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন এই ইলিশ গবেষক।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, ২২ দিনব্যাপী মা ইলিশ অভয়াশ্রম কার্যক্রম সফল করতে জেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় আমরা দিন-রাত নদীতে টহল দিয়েছি। তা ছাড়া এবারই প্রথম মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে বিমানবাহিনী ও র‌্যাব নদীতে অভিযানে যোগ দিয়েছে। সমন্বিত কার্যক্রমের ফলে এ বছর অভিযান সফল হয়েছে। তার পরেও কিছু অসাধু জেলে নদীতে ইলিশ ধরেছে।

আসাদুল বাকী জানান, এ বছর মোট ২শ’ ৮৫টি অভিযানের মাধ্যমে ৭ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার মিটার কারেন্ট জাল, ৫ হাজার ১৯২ কেজি ইলিশসহ ৩১১ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে।

আটক জেলেদের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২৪৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান এবং ৬৩ জনকে মোট ২ লাখ ৪ হাজার ১শ’ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

দেশে ইলিশের উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অতীতের ন্যায় কাজ করবে যাবে মৎস্য বিভাগ। বিশেষ করে আগামী জাটকা মৌসুমে আরও কঠোরভাবে নদীতে অভিযান চালানো হবে জানান তিনি।