লকডাউনের খবরের আতঙ্কে শেয়ারবাজারে ধস নামলেও লকডাউনের মধ্যে দেশের শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। চলমান লকডাউনের দুইদিনেই শেয়ারবাজারে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে।
শেয়ারবাজারে এই ইতিবাচক প্রভাব পড়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের সাহসী নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন বিনিয়োগকারীরা।
তারা বলছেন, বিএসইসির চেয়ারম্যানের ভূমিকার কারণেই লকডাউনের মধ্যে শেয়ারবাজারে লেনদেন চলমান রয়েছে। লেনদেন চালু রাখতে না পারলে বাজারে নেতিবাচক বার্তা যেত এবং বাজার খারাপ হতো।
তারা আরও বলছেন, লেনদেন চালু রাখার পাশাপাশি মার্জিন ঋণের বিষয়েও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। মার্জিন ঋণের হার বাড়িয়ে দেয়ায় বাজারে এখন তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয়।
সময়ের সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকা বড় হতে থাকে। ফলে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও বাড়তে থাকে। এতে দুই ঘণ্টার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০৩ পয়েন্টে বেড়ে ৫ হাজার ২৮১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। আগের দিন এই সূচকটি বাড়ে ৮৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ লকডাউনের দুইদিনে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ১৯২ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের। আগের দিনের তুলনায় সূচকটি ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। লকডাউনের প্রথম দিনও এই সূচকটি ৪৩ পয়েন্ট বাড়ে। এ হিসাবে দুই দিনে সূচকটি বাড়ল ৮৬ পয়েন্ট।
ডিএসইর অপর সূচক ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২০৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত এই সূচকটি আগের দিন বাড়ে ১৬ পয়েন্ট। এ হিসাবে লকডাউনের দুইদিনে সূচকটি বাড়ল ৩৭ পয়েন্ট।
সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। দিনের লেনদেন শেষে ২৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। আর ৯১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বৃদ্ধি এবং সূচকের উল্লম্ফনের পাশাপাশি লেনদেনেও ভালো গতি দেখা দিয়েছে। মাত্র দুই ঘণ্টাতেই ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫০৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৭২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। যা আগের কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।
আগের দিন বাজার মূলধন বাড়ে ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ লকডাউনের দুই দিনে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়লো ১৭ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৯৭ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ১৮৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪৬টির, কমেছে ১২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির।
শেয়ারবাজারে দেখা দেয়া এই উল্লম্ফনের বিষয়ে বিনিয়োগকারী ফিরোজ বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যানের ভূমিকার কারণেই লকডাউনের মধ্যে শেয়ারবাজারে লেনদেন চলমান রয়েছে। লকডাউনে শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে। যার প্রতিফলন বাজারে দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ করে দিলে তা খুবই খারাপ হতো। বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। বিএসইসির চেয়ারম্যান সেটি হতে দেননি। এর পাশাপাশি মার্জিন ঋণের বিষয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মার্জিন ঋণের রেশিও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে অনেক বিনিয়োগকারী ফোর্সড সেলের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। শেয়ারবাজারে এটিরও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শফিকুল ইসলাম নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের সাহসী নেতৃত্বের প্রশংসা না করে পারা যায় না। লকডাউনের আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়ারবাজারের লেনদেন চলবে। আগেই দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী তিনি শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু রেখেছেন। এটি বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও আস্থা বাড়িছে। এর সঙ্গে মার্জিন ঋণের রেশিও বাড়ানোর কারণে বিক্রি চাপ কমেছে। এসব কিছুর ইতিবাচক ফল বাজারে দেখা যাচ্ছে।