তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাপান চায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হচ্ছে উন্নয়নের পূর্বশর্ত। বিএনপি ও তার মিত্ররা যে সাংঘর্ষিক রাজনীতি করে, সেই বিষয়টি আমি তার সামনে তুলে ধরেছি। এগুলো যে উন্নয়নের প্রতিকূলতা, সে বিষয়ে তিনিও একমত।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ভূমিকার জন্য এবং স্বাধীনতা অর্জনের পর আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়নে তাদের যে ভূমিকা, সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, আমার সঙ্গে আলাপচারিতায় ইতো নাওকি আশাবাদ প্রকাশ করেছেন, আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে।
কয়েকদিন আগে জাপান-বাংলাদেশ মিত্রতার ৫০ বছর উদযাপন হয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জাপানের অনেকগুলো প্রকল্প চলমান। আমরা তা নিয়ে আলোচনা করছি। আগামীকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনে জাপান আগ্রহ দেখিয়েছে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ দিকে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বাংলায় গান গাইতে পারেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তাকে জিজ্ঞেস করলাম, জাপানে চলে গেলে আপনার বাংলা গানের চর্চার কী হবে? সেটা অব্যাহত রাখতে হবে। এভাবে নানা বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা আলোচনা করেছি, পলিটিক্স অব ডিনায়েল, পলিটিক্স অব কনফ্রন্টেশন। সবকিছুতে না-বলার সংস্কৃতি বন্ধ করা উচিত।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি ও তার মিত্ররা যে সাংঘর্ষিক রাজনীতি করে, সেই বিষয়টি আমি তার সামনে তুলে ধরেছি। এগুলো যে উন্নয়নের প্রতিকূলতা, সে বিষয়ে তিনিও একমত। আমার সঙ্গে আলাপকালে তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে।
প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সফর নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কারণ সফর এরই মধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। সুতরাং সফর নিয়ে আলোচনার বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করবে।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গণগ্রেফতার চলছে বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন, পহেলা ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজয় দিবস, একই সঙ্গে সামনে নতুন বছর উদযাপন ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সরকার বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। প্রতি বছরই এমনটি ঘটছে। বিশেষ অভিযান পহেলা ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়। সেখানে বিএনপির মধ্যে আছে অগ্নিসন্ত্রাসীরা, সারাদেশে যারা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছিল, মানুষ হত্যা করেছিল, তারা তো বিএনপির নেতাকর্মী। তাদের কাউকে যদি গ্রেফতার করা হয়, সেটিতে আইনগত বিষয়।
তার মতে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। যারা আগুন সন্ত্রাসের জন্য অর্থ দিয়েছিল, হুকুম দিয়েছিল, তাদের তো এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। মানুষ মনে করছে, তাদেরও গ্রেফতার করা দরকার।
বিএনপি এখন নয়াল্টন থেকে সরে এসে কাকরাইল, আরামবাগ কিংবা মতিঝিল এলাকায় সমাবেশ করতে চাচ্ছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি টেলিভিশনে দেখেছি, বিকল্প প্রস্তাব পেলে তারা সেটি নিয়েই কাজ করবে। হ্যাঁ, বিকল্প তো আছে। জনসভা তো হয় ময়দানে। জনসভা তো রাস্তায় হয় না। গাড়িঘোড়া বন্ধ করে মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে জনসভা করা কোনো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের কাজ না।
আওয়ামী লীগের জনসভায় একটু ভোগান্তি হলেই তো কয়েকটি পত্রিকা লেখে যে ‘জনসভায় মানুষ হয়েছে, তবে মানুষের ভোগান্তি হয়েছে’। সেই পত্রিকাগুলোকে এখন বিএনপির রাস্তায় জনসমাবেশ করতে চাওয়া নিয়ে লিখতে দেখি না। যোগ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, গতকাল আমরা চট্টগ্রামে জনসমাবেশ করেছি, তাতে লাখ লাখ মানুষ এসেছেন। পাঁচ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ছিল মানুষে সয়লাব। কিন্তু আমরা ময়দানেই সমাবেশ করেছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের সব বড় সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু বিএনপির তা পছন্দ না। তাদের শুধু রাস্তাঘাট পছন্দ। ব্যস্ত রাস্তা, যেখানে জনবসতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য আছে, সেখানে তাদের পছন্দ। কারণ গাড়িঘোড়া ভাঙচুর করা যাবে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া যাবে। সে কারণেই তারা রাস্তায় সমাবেশ করতে চাচ্ছে।