Home অর্থ-বাণিজ্য শেয়ারবাজার: দুই শতাংশের বেশি দাম কমতে পারবে না

শেয়ারবাজার: দুই শতাংশের বেশি দাম কমতে পারবে না

46
0
SHARE

তালিকাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম একদিনে সর্বোচ্চ দুই শতাংশের বেশি কমতে পারবে না বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামীকাল বুধবার থেকে এ নিয়ম কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিএসইসির কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদিন আহমেদ।

এর আগে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে ২০২০ সালে দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামলে ওই বছরের ১৯ মার্চ প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করেছিল বিএসইসি।

তবে বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় গত বছরের (২০২১ সালের) জুনে সব প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। পাশাপাশি ছয়টি ক্যাটাগরিতে সার্কিট ব্রেকার (দাম কমা বা বাড়ার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা) নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

ওই সময় নির্ধারণ করা নিয়ম অনুযায়ী, ২০০ টাকার নিচে থাকা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার নির্ধারণ করা হয় ১০ শতাংশ। অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা ইউনিটের দাম ২০০ টাকার নিচে তার শেয়ার বা ইউনিটের দাম একদিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে বা কমতে পারবে।

একইভাবে শেয়ার বা ইউনিটের দাম ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠানের সার্কিট ব্রেকার ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, ১০০০ থেকে ২০০০ টাকার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২০০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার ৫ শতাংশ এবং ৫০০০ টাকার ওপরে হলে সার্কিট ব্রেকার ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত এ নিয়মেই শেয়ারবাজারে লেনদেন চলছিল।

তবে আগামীকাল বুধবার থেকে শেয়ার বা ইউনিটের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারে আগের নিয়মই বহাল থাকবে। দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা হবে ২ শতাংশ। অর্থাৎ দুই শতাংশের নিচে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমতে পারবে না।

শেয়ার বা ইউনিটের দাম কমার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন একটি নিয়ম করার সংবাদ মঙ্গলবার লেনদেন চলাকালেই শেয়ারবাজারে চলে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে লেনদেনের শুরুতে সূচকের বড় পতন দেখা দেয়, যদিও শেষ দিকে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থেকে দিনের লেনদেন শেষ হয়।

এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দেয়। এতে সোমবার পর্যন্ত শেষ আট কার্যদিবসের মধ্যে সাত কার্যদিবসেই পতন দিয়ে পার করেছে শেয়ারবাজার। এ পতনের মধ্যে পড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪৯২ পয়েন্ট কমে যায়। শেয়ারবাজারে এমন দরপতনের প্রেক্ষিতেই পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখন সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন নিয়ে এলো।

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন বলেন, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের মৌলিক ও প্রধান কাজ। এজন্য আমরা নানাবিধ চেষ্টা করে থাকি। যার ধারাবাহিকতায় দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ ও স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি আগের ন্যায় দীর্ঘমেয়াদি হবে না। পরিস্থিতির উন্নতি হলে ২ শতাংশ সীমা তুলে নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সেকেন্ডারি মার্কেটে তারল্যপ্রবাহ নিশ্চিতকল্পে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) থেকে আরও ১০০ কোটি টাকা দ্রুত বিনিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যা আজ থেকেই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

বিএসইসির এ কমিশনার বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধাবস্থা এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের একটি জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণাকে অনেকে বড় প্রচার করছেন। বিভিন্ন গুজবও ছড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩৫ জন গুজবকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল ব্যবহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিবাচক। কিন্তু এখনো অনেক ব্যাংক ওই ফান্ড গঠন করেনি। এছাড়া কেউ কেউ ফান্ড গঠন করলেও তা ব্যবহার করেনি।

শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি বাড়াতে ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কমিশন টি+১ সেটেলমেন্ট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে টি+১ সেটেলমেন্টের প্রকৃত অর্থে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, তা যাচাই করা হবে। কোনো ইতিবাচক ফলাফল ছাড়া চালু করতে চাই না।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ভূমিকা যেমন হওয়া দরকার ছিল, তা কোম্পানিটির বর্তমান ম্যানেজমেন্ট উপলব্ধি করছেন। আশা করি এ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি আগামীতে শেয়ারবাজারে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসির এ কমিশনার আরও বলেন, আমাদের দেশে মার্কেট মেকারের আইন আছে। কিন্তু মার্কেট মেকার নেই। যদি দেশে বড় বড় মার্কেট মেকার থাকতো, তাহলে বর্তমান এ পরিস্থিতি কাটানো যেতো। এটি শেয়ারবাজারের জন্য খুবই কার্যকর। যা বিশ্বের সব দেশেই আছে।